অধ্যায়ঃ হৃদয় গলানো ঘটনা ও উপদেশ
__________________________________________
আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করেনা
মানুষের যতগুলো অনুভূতি আছে, সম্ভবত সবচাইতে হতাশাজনক ও খারাপ একটা হচ্ছে “আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করেনা”। দুঃখ কষ্টে পড়লে শয়তান মানুষকে জীবন সম্পর্কে বিরূপ করে তুলে, আমার জীবনের কোন মূল্য নেই বা আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে, এমন চিন্তা-ভাবনা অন্তরে ঢুকিয়ে দেয়। এমন অবস্থায় মানুষের অন্তরে আল্লাহ এবং তাক্বদীর বা ভাগ্যের লেখা সম্পর্কে বাজে ধারণা সৃষ্টি হয়, অনেকে হতাশ হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় অনেকে প্রশ্ন করেঃ
(১) আল্লাহ মানুষ কেনো বানাইলেন?
(২) আমি আর বাঁচতে চাইনা।
(৩) বেঁচে থেকে কি লাভ?
(৪) আমি মরে গেলেই ভালো হয়।
আমাদের যদি পরকালের প্রতি বিশ্বাস থাকে তাহলে মনে রাখা প্রয়োজন, দুনিয়ার জীবন পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুইনা। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্যে। আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত সুখী হতে পারে। আর দুনিয়ার জীবনের জন্যে যেই জিনিসগুলো প্রয়োজন সেইগুলো পাওয়ার জন্যে চেষ্টা করতে হবে, আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে দুয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে....এবং সুখে ও দুঃখে সর্বাবস্থাতে ধৈর্য ধরতে হবে। যেই সমস্ত ভাই ও বোনেরা এ ব্যপারে ফিতনাহ (পরীক্ষা) বা শয়তানের ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রনায়) পড়েছেন, আমি তাদেরকে বলবো আপনারা ঈমান কি তা শিক্ষা করুন, ক্বুরআন সম্পর্কে জানুন। যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চায়, আল্লাহ তাকে পথ দেখান। যে আল্লাহ সম্পর্কে ভুল বা বাজে ধারণা রাখে, সে দুনিয়াতে অত্যন্ত কষ্টের জীবন বহন করে। আমি দুয়া করি, আল্লাহ তাঁর সমস্ত বান্দা ও বান্দীদেরকে মাফ করুন, বিশেষ করে যারা দুঃখ-কষ্টের মাঝে আছে তাদের প্রতি রহম করুন, তাদেরকে সুন্দর ফয়সালা দান করুন, আমিন।
দুঃখ ও দুশ্চিন্তা, দারিদ্র ও ঋণগ্রস্থ হওয়া থেকে মুক্তির জন্য দুয়া
যারা স্বচ্ছল অবস্থায় শান্তিতে আছেন, তারা যেনো কঠিন পেরেশানি, বড় বিপদ, বড় ঋণের বোঝা, মানুষের, অলসতা, অক্ষমতা, কাপুরুষতার স্বীকার না হন, সেই জন্য নিয়মিত এই দুয়া পড়া উচিৎ। আর যারা এইগুলোর স্বীকার হয়েছেন তারাও নিয়মিত এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ’ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হা’যান, ওয়াল আ’জযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বোলাই’দ-দ্বাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অলসতা ও অক্ষমতা থেকে, কৃপণতা ও কাপুরুষতা থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে। সহীহ বুখারীঃ ২৮৯৩।
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুআ’টি বেশি বেশি করে পড়তেন। ফাতহুল বুখারীঃ ১১/১৭৩।
__________________________________________
মানুষের জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত
মুসলমানদের ঘরে যখন কোন শিশু জন্মগ্রহণ করে, তখন তার জন্যে আযান দেওয়া হয়, কিন্তু সেই আযানের পরে কোন সালাত পড়া হয়না। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের জন্মের একেবারে শুরু থেকেই আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল এই কথা শিক্ষা দেওয়া। আবার আযানে সালাতের দিকে আহবান রয়েছে, এখানে তাকে স্বরণ করিয়ে দেওয়া যে, আল্লাহ মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদত করার জন্যে। পরবর্তীতে সেই শিশুটি যখন বড় হয়, ৬০ বছর/৭০ বছর হায়াত শেষে মারা যায়, তখন তাকে গোসল করিয়ে তার জানাযার সালাত পড়া হয়, কিন্তু সেই সালাতের জন্যে কোন আযান বা ইকামত দেওয়া হয়না। এই ব্যপারটি দ্বারা এখানে ইশারা রয়েছে যে, মানুষের জীবন আসললে খুবই ছোট, যেন একটা ওয়াক্তের আযান দেওয়া ও তার নামায পড়ার মধ্যে অল্প একটু সময়ের ব্যবধান মাত্র। শেষ বিচারের দিন কাফির, মুশরেক, মুনাফেক ও পাপীষ্ঠরা যখন জাহান্নামের কঠিন শাস্তি দেখবে তখন আফসোস করতে থাকবে আর আল্লাহর কাছে অনুরোধ করে বলবে, হে আল্লাহ আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। আপনি আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়াতে পাঠান, তাহলে আমরা ঈমান আনবো এবং নেক আমল করবো। কিন্তু তাদের এই প্রার্থনা কবুল করা হবেনা। তখন আল্লাহ বলবেন, দুনিয়াতে তোমরা কতদিন অবস্থান করেছিলে? জাহান্নামীরা বলনে, একদিন বা মাত্র এক বেলা। আল্লাহ তখন বলবেন, সত্যিই তোমরা দুনিয়াতে খুব অল্প সময় অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা সেটা বুঝতে পারতে! (সুরা মুমিনের শেষের দিকের আয়াত অবলম্বনে)।
__________________________________________
©সিরাতাল মুস্তাকিম

লেখক: 
