সেদিন সহীহ বুখারীর হাদীস পড়ছিলাম। হঠাৎ একটি হাদীসে চোখ আটকে গেলো-
"আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, “ নবী (সাঃ) সোনার আংটি পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।” (বুখারী- আদাবুয যিফাফ-২১৪)"
এ কথাটি এর আগেও আরো অনেকবার শুনেছি। কিন্তু তখন এটাকে তেমন গুরুত্ব দেইনি। আজ হঠাৎ মনে হলো সোনা পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার যথাযথ কারণ নিশ্চয়ই আছে। সুতরাং এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। একটু ঘাটাঘাটি করতেই আমার উত্তর পেয়ে গেলাম।
.
পুরুষে সোনার ক্ষতিকর দিক জেনে আমি অবাক হইনি। কিন্তু অবাক হয়েছি এটা ভেবে যে, প্রায় ১৪০০ বছর আগের একজন মানুষ কিভাবে এটা জানতেন! পরক্ষনেই আমার বিবেক তার উত্তর দিলো। তিনি ছিলেন সত্য নবী ও রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। সোনার সৃষ্টিকর্তাই তাকে সোনার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত করিয়েছিলেন। আল্লাহু আকবার। এবার আসুন জেনে নেই পুরুষের জন্য সোনা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ।
.
সোনার সংস্পর্শ পুরুষের দেহে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।ফলে দেহে লোহিত রক্ত কণিকার(red blood cell) প্রয়োজনীয় জায়গা(space) কমতে থাকে। যার কারণে দেহে উভয় রক্ত কণিকার মধ্যকার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।[1]
এটা এনিমিয়া এবং ব্লাড ক্যান্সার এর কারণ হতে পারে।
এই সমস্যাটা শুধুমাত্র পুরুষের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
অন্যদিকে নারীরা এর থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই হাদীসে শুধু পুরুষকে নিষেধ করা হয়েছে।
এবার আসুন জেনে নেই কেন এটা নারীর জন্য ক্ষতিকর নয়।
.
গবেষণায় দেখা গেছে যে,নারী এবং পুরুষের দৈহিক গঠনে কিছু পার্থক্য( minor differences) রয়েছে।
সোনায় এক ধরনের রশ্মি(ray) থাকে যা শরীরের ত্বক এবং রক্ত কোষকে(blood cell) প্রভাবিত করে। আর এটা ঘটে শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে।[2]
কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে না ঘটার কারণ হলো, নারীর দেহে ত্বক এবং মাংসের মধ্যে(between the skin and flesh) চর্বির(fat) স্তর থাকে। এই স্তরটি ক্ষতিকারক রশ্মির বিরুদ্ধে প্রহরীর মতো কাজ করে। ফলে নারীরা সোনার ক্ষতিকর দিক থেকে বেচে যায়।
.
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন হাদীসে পুরুষের জন্য সোনা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ।
এ সংক্রান্ত হাদিস গুলো :
পুরুষের জন্য সোনার চেন, ঘড়ি, আংটি, বোতাম, কলম ইত্যাদি ব্যবহার বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেন, “সোনা ও রেশম আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত ৪৩৪১ নং)
.
ইবনে আব্বাস (রঃ) হতে বর্ণিত, একদা আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখলেন। তিনি তাঁর হাত থেকে তা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, “তোমাদের কেউ কি ইচ্ছাকৃত দোযখের আঙ্গারকে হাতে নিয়ে ব্যবহার করে?”
.
অতঃপর নবী (সঃ) চলে গেলে লোকটিকে বলা হল, ‘’তোমার আংটিটা কুড়িয়ে নিয়ে অন্য কাজে লাগাও। (অথবা তা বিক্রয় করে মূল্যটা কাজে লাগাও।) কিন্তু লোকটি বলল, “আল্লাহ্র কসম! আমি আর কক্ষনো তা গ্রহণ করব না, যা আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।” (মুসলিম ২০৯০ নং)
রেফারেন্স:
1. Babaee S. Gold Determination In Blood And
Urine Using Atomic Absorption In Tehran
Citizens. Rahavarde Danesh magazine.
2001;3:36-42.
.
2. Malekzadeh shafaroudi M. Gold measured In
Human Biological Fluids. Journal of
Mazandaran University of Medical Sciences.
1995;5(10):74-80.
♦||হাদীসের বিস্ময়||
-নাবিল হাসান।
♦ঈষৎ সম্পাদিত
©সিরাতাল মুস্তাকিম

লেখক: 
