জান্নাত

মানুষের কল্পনাশক্তি যেখানে গিয়ে থেমে যাবে, জান্নাতের সৌন্দর্য সেখান থেকেই শুরু।

যেসব আমল জান্নাতে নিয়ে যাবে!
.
মানুষের কল্পনাশক্তি যেখানে গিয়ে থেমে যাবে, জান্নাতের সৌন্দর্য সেখান থেকেই শুরু। মানুষ জান্নাতকে যতোটা সুন্দর কল্পনা করতে পারবে, জান্নাত তারচেয়েও সুন্দর। আল্লাহ জান্নাত নির্মাণ করেছেন, মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। একদিকে আল্লাহ জানেন জান্নাতের বর্ণনা, অন্যদিকে তিনি জানেন মানুষের কল্পনাশক্তির দৌড়। দুটোকে একসাথে রেখে আল্লাহ বর্ণনা দিয়েছেনঃ

“আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন বস্তু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো মানুষের কল্পনায়ও আসেনি।” [সহীহ বুখারীঃ ৭৪৯৮]

আল্লাহ এমন এক জান্নাত নির্মাণ করেছেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী বয়ে যাবে, যেখানে মানুষ যা চাইবে তা-ই পাবে, যেখানে মানুষ মারা যাবে না, যেখানে কোনো দুঃখ থাকবে না, যেখানে একবার প্রবেশ করার পর আর বের হবে না, যেখানে যাবার পর আল্লাহ কখনো কারো উপর অসন্তুষ্ট হবেন না।

কিন্তু, এই জান্নাত আল্লাহ কাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন? জান্নাতের অপার নিয়ামত কারা ভোগ করবে?

আল্লাহ জান্নাত নির্মাণ করেছেন মুমিনদের জন্য। মুমিনদের কৃতকর্মের পুরস্কার হিশেবে আল্লাহ জান্নাত দান করবেন। আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনের জান ও মাল  ‘ক্রয়’ করেছেন। পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ বলেনঃ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।” [সূরা আত-তাওবাঃ ৯:১১১]

আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

“কোনো ব্যক্তি জানে না, তারা যা করতো তার বিনিময়স্বরূপ কী নয়নাভিরাম জিনিস তাদের জন্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” [সূরা আস-সাজদাহঃ ৩২:১৭]

আল্লাহর ওয়াদা হলো- মুমিন ব্যক্তির আমলের বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত দান করবেন। জান্নাত লাভের একটি শর্ত হলো- আল্লাহর উপর বিশ্বাস এবং রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশিত পথে জীবনযাপন।

তাই বলে, আমল জান্নাত লাভের জন্য যথেষ্ট না। আমল জান্নাতে এনে দিতে পারে না, যদি না আল্লাহ দয়া-অনুগ্রহ করেন।

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু যে প্রজন্ম ছিলো, সেই প্রজন্ম ছিলো সাহাবীদের। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু যিনি ছিলেন তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যিনি আল্লাহর ইবাদাত করেন, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাঁর পরে যে প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি আল্লাহর ইবাদাত করে, তারা হলেন সাহাবীরা।

আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ইবাদাতকারী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ইবাদাতকারী প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ

“তোমাদের কারো আমলনামা তাকে নাজাত এনে দিতে পারবে না।” কী ভয়ঙ্কর একটা কথা! কথাটি শুনামাত্র সাহাবীরা রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! এমনকি আপনাকেও না?” যিনি সবচেয়ে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করেছেন, তিনিও উত্তর দিলেন, “না, এমনকি আমাকেও না।”

তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাত পাবেন কিভাবে?

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যদি না আল্লাহ আমার উপর অনুগ্রহ করেন।” তাই বলে আল্লাহর অনুগ্রহের আশায় আমল ছেড়ে বসে থাকার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেননি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই হাদীসে বলেন, “তোমরা আমল করে আল্লাহর নৈকিট্য লাভ করো।” [সহীহ বুখারীঃ ৬৪৬৩]

অর্থাৎ, আমল করলে আশা করা যায় আল্লাহ অনুগ্রহ করে জান্নাত দান করবেন।

আল্লাহ জান্নাত নির্মাণ করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর কাছ থেকে ওহীর মাধ্যমে কিভাবে জান্নাতে যাওয়া যায় সেই পথ বলে গেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাহাবী এসে রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেছেন, ‘জান্নাত লাভের জন্য কী করবো?’ আবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ থেকে মাঝেমাঝে সাহাবীদেরকে জান্নাত লাভের আমল বলে দিতেন। এমন সব আমল, যেগুলো কেউ যদি আল্লাহকে খুশি করার জন্য করে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন।

রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেওয়া সাজেশন অনুযায়ী যেসকল আমল নিশ্চিত জান্নাতে এনে দেয়ঃ

-  যে ব্যক্তি তার জিহবা এবং লজ্জাস্থানকে হিফাজত রাখবে, খোদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার (Guarantor)। [সহীহ বুখারীঃ ৬৪৭৪]

.

- যে ব্যক্তি ইয়াতিমের প্রতিপালন করবে, সে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জান্নাতে পাশাপাশি থাকবেন। [সহীহ বুখারীঃ ৫৩০৪]

.

- যে ব্যক্তি দুটো মেয়ে সন্তানকে লালন-পালন করবে, সে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে জান্নাতে থাকবে। [জামে আত-তিরমিজিঃ ১৯১৪]

.

- যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ নির্ধারিত সময়ে পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেন। [সুনানে আবু দাউদঃ ৪৩০]

.

- যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী (বাকারাঃ ২:২৫৫) পাঠ করবে, তার জান্নাতে যাবার পথে অন্তরায় হবে শুধু মৃত্যু। [আল-মু’জাম আল-কাবীরঃ ৭৪০৬]

.

 - যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য রাস্তায় বের হয়, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। [সহীহ মুসলিমঃ ৬৭৪৬]

.

- যে ব্যক্তি কারো কাছে কোনো কিছু ভিক্ষা না চাইবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবেন। [সুনানে আবু দাউদঃ ১৬৪৩]
.

- যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক পরিহার করবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটা ঘরের জিম্মাদার। যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য জান্নাতের মাঝখানের একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমন্ডিত করবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি ঘরের জিম্মাদার হবেন। [সুনানে আবু দাউদঃ ৪৮০০]
.

- যে ব্যক্তি রোজা রাখে, জানাজা পড়ে, মিসকিনকে খাওয়ায়, রোগীকে দেখতে যায়, তার মধ্যে এসব কাজের সমাবেশ ঘটলে সে জান্নাতে যাবে। [সহীহ মুসলিমঃ ২২৬৪]

.

- যারা সালামের প্রসার ঘটাবে, খাদ্য দান করবে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজে দাঁড়াবে, তারা নিশ্চিন্তে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [জামে আত-তিরমিজিঃ ২৪৮৫]

.

- যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। [সহীহ বুখারীঃ ২৭৮৭] আল্লাহর পথে সে যদি উষ্ট্রী দোহনের সময় পরিমাণও যুদ্ধ করে, জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। [সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২৭৯২]
.

- যে ব্যক্তি হজ্জ্বে মাবরূর করবে, আল্লাহ এর প্রতিদানে তাকে জান্নাত দান করবেন। [সহীহ বুখারীঃ ১৭৭৩]
.

 - যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ এর বিনিময়ে জান্নাতে তার জন্য এমন একটি ঘর নির্মাণ করবেন। [সহীহ বুখারীঃ ৪৫০]
.

- যে ব্যক্তি দুই শীতের নামাজ (ফজর ও আসর) আদায় করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [সহীহ বুখারীঃ ৫৭৪]

.

- যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব হিশেবে, ইসলামকে দ্বীন হিশেবে এবং মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবী হিশেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়, জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। [সুনানে আন-নাসাঈঃ ৩১৩১]
.

- যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজান মাসে রোজা রাখে, তার সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা করবে প্রবেশ করতে পারবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ১৬৬১]
.

- যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের জন্য দু’আ করবে, জান্নাত তার জন্য দু’আ করবে- হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। [জামে আত-তিরমিজিঃ ২৫৭২]
.

- যে ব্যক্তির সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সুনানে আবু দাউদঃ ৩১১৬]

..
..

জান্নাতে যাবার আমলগুলো সহজ। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পাবার মতো। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পেয়ে কেউ যদি পাশ করতে না পারে, তার মতো অকর্মট আর কেউ হতে পারে?

জান্নাত পাবার জন্য রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেওয়া সাজেশনগুলো পরীক্ষার আগের রাতে পাওয়া প্রশ্নের মতো। আমলগুলো করা সহজ। বিনিময়ে অনন্তকালের জান্নাত।

তবে, জান্নাত লাভের বেশিরভাগ আমলগুলো হলো নিয়মিত আমল। আর আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল হলো সেই আমল, যা নিয়মিত করা হয়। [সহীহ বুখারীঃ ৪৩]

জান্নাত লাভের অন্তত একটা আমলকে টার্গেট করে আমরা সিলেবাস শেষ করতে পারি। একটি প্রশ্ন 'কমন' পড়লেই জান্নাত।
.
.
📝লেখা: আরিফুল ইসলাম!

#FEAR_ALLAH


আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

Related Posts

Facebook