ইসলামে নারী

এদেশে বাইরে পর্দা করার থেকে ঘরে পর্দা রক্ষা করাই বড় কঠিন..

এদেশে বাইরে পর্দা করার থেকে ঘরে পর্দা রক্ষা করাই বড় কঠিন.. 
প্রথম যেদিন ভাসুরের সামনে নিকাব করে গেলাম তখন তিনি মুখের উপর আমায় বললো এখানে কোনো বোরকা নিকাব চলবে না। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম কোনো কথা না বলে। 

যৌথ পরিবারে বিয়ে হয়েছে, তিন ভাসুরের সাথে আমার পর্দা নিয়ে শুরু হলো লড়াই। ননদের ছেলেটাও আমাদের সাথেই থাকে। 
বিয়ের পর সুন্নাতি জামা পড়ে বড় ওড়না দিয়ে শুরু করলাম শ্বশুড়বাড়ির পর্দা। নিকাব করে রান্নাঘরের যাবতীয় কাজ করতে হতো প্রচন্ড গরমের মধ্যে ও। বোরকা পড়ে বিয়ে করেছিলাম বলে কোনো গায়ের মাহরাম আমাকে দেখতে পারেনা। 
এটা ছিলো আমার চাচাতো ভাসুরদের অন্যতম আক্ষেপ। তারা শুরু করলো লুকিয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণ করা।আমি ঘুমিয়ে থাকলে হুটহাট জানালা খোলার চেষ্টা করতো। 
একদিন রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকার সময় আমার ননদ প্রচন্ড আক্ষেপের সাথে বলতে শুরু করলেন আমরা এত পর্দানশীল মেয়ে চাইনি। আমার মা চায় এমন একটা লক্ষ্মী বৌ আসবে যে সবার সাথে পুতুলের মতো হেসে খেলে গল্প করবে। আমি চুপ রইলাম। একদিন আমার বড় জা আমাকে ডেকে বললেন, "তোমার এ পর্দা তোমার ভাসুরের পছন্দ নয়!"
তখন ভেতরে কেমন যেন অসহায় লাগলো।বললাম ভাইকে খবর দেন,"তাঁর এরকম অপছন্দে আল্লাহ তাআ'লা অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
আমি তো ভাইকে সন্তুষ্ট করতে এ বাড়িতে আসিনি,তাকে বলবেন আমি তাঁর ছোট ভাইয়ের আহলিয়া এবং তার জন্যে হারাম।"

এভাবে আমি যেন এ যুদ্ধে হেরে না যাই, আমার স্বামী দ্রুত তাঁর চাকরির অজুহাত দেখিয়ে আলাদা বাসার ব্যবস্থা করলেন। এতকিছুর ভেতর তিনি আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেবার চেষ্টা করে গেছেন। তিনি নিজেও একা দ্বীনদার হওয়াতে, তাঁর সুন্নাতি দাড়ি লেবাস ধরে রাখতে এমন পরিবেশে ভীষন কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। 

এরপর আলাদা বাসায় গায়ের মাহরাম মেহমান আসলে আমি সম্পূর্ণ আয়োজন সেরে পর্দার আড়ালে চলে যেতাম এবং আমার স্বামী তাদের খেদমত করতে থাকেন। ননদ আমার বাসায় মেহমান হয়ে আসলেন, এখন তাঁর ছেলের সামনে আমার পর্দা করা নিয়ে সমস্যা দেখা গেল।
কিন্তু আমার কেন জানিনা কারো কথাই গায়ে লাগতো না!  উল্টো তালিম করে তাকে দ্বীনি বুঝ ভেতরে ঢেলে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম।  
এরপর আমি ঠিক করলাম যখনই শ্বশুড়বাড়িতে থাকবো, যতক্ষন । ঠিক ততক্ষণ আমি জিলবাব পড়ে থাকবো। ঠিক সেটাই করলাম। আমার স্বামী এই  প্রথম বললো এরকম কেন! এটা খুলে ফেলো৷ আমি তাকে বললাম, আমি চাইনা আমার অর্ধাঙ্গ দাইয়্যুসের খাতায় চুল পরিমান নাম লেখাক।তিনি চুপ করে গেলেন।
এরপর থেকে শ্বশুড়বাড়িতে জিলবাব পড়ে ঘুমাতে শুরু করলাম,খেতে শুরু করলাম,কাজ করতে শুরু করলাম।আলহামদুলিল্লাহ্,কখনো মনে হয়নি কষ্টের এটা। বরং মনে হতে থাকলো, হে আল্লাহ তুমি আমায় সুযোগ দিলে। সত্যিই সুযোগ দিলে।জেনারেল থেকে পড়ে পর্দায় আসতে চেয়েছিলাম সে পথ তুমি সহজ করে দিলে সহ্যশক্তি বাড়িয়ে.... 
আল্লাহ তাআ'লা যাকে খুশি তাকে হেদায়েত দেন,যাকে খুশি তাকে পরীক্ষা নেন এবং সবাইকে দেন সবরের উত্তম প্রতিদান।  আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল। 

সত্যিকার অর্থেই এদেশে বাইরে থেকে ঘরে মেয়েদের পর্দা করা কঠিন,যদি সেখানে দ্বীনি পরিবেশ না থাকে। প্রিয় ভাইয়েরা, এই পরিবেশ একা সৃষ্টি সম্ভব নয়। আপনার গায়ের মাহরাম বোনদেরকে পর্দার সুযোগ করে দিন।

-আশফিকা নওশিন।

আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

Related Posts

Facebook