ইসলামিক পরিবার

দাম্পত্য জীবনের তিক্ততা ও দূরত্ব যেভাবে দূর করবেন (পর্ব এক)

মারওয়া আব্দুল্লাহ; অনুবাদঃ সিরাজুম মুহসিনা সিলভিয়া


দুইজন মানুষের পারস্পারিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক হলো জীবনসাথীর সঙ্গে সম্পর্ক বা দাম্পত্যজীবন। এই সম্পর্ককে সুন্দর রাখতে হলে প্রয়োজন সচেতন হয়ে যত্নের সাথে একে আগলে রাখা
স্বামী স্ত্রী পরস্পরের মাঝে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে অসাধারণ ও সুন্দর সম্পর্ক থাকবে এটাই সব সময় প্রত্যাশা করা হয়।  কিন্তু মাঝে মাঝে এ সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে যায় যে তা মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে অনেক বেশী ক্ষতিকর হয়ে যায়।
কোনো কোনো সময় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে উঠে যে, আবেগীয় সীমানাগুলো অস্পষ্ট হতে শুরু করে। তখন তারা নিজেরা তাদের এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনা। এমনকি নিজে নিজে সমস্যাগুলো চিহ্নিতও করতে পারে না। এ ধরণের সমস্যায় ভুগছেন যে দম্পতিরা এবং সম্পর্কটি পুনরায় সুন্দর ও সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে চাচ্ছেন- তারা এ লেখার মাধ্যমে একটি নির্দেশনা পাবেন। আশা করছি তারা তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দর করতে পারবেন এবং এ সম্পর্ককে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবেন। 


সম্পর্কের তিক্ততা স্বীকার করুন

একটি তিক্ত সম্পর্ককে সহজ ও সুন্দর করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো ধীরে ধীরে দাম্পত্যজীবনে তিক্ততা সৃষ্টি হচ্ছে এ ব্যাপারটি অনুধাবন করা। অনেক সময় বাসার অন্যান্য সদস্য এবং প্রতিবেশীরা বুঝলেও স্বামী-স্ত্রী সবার শেষে নিজেদের তিক্ত সম্পর্কের অস্তিত্ব টের পায়। কারণ তারা নিজেদের এ ধরণের সম্পর্কের সাথে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় যে, তারা ভাবতে থাকে এভাবেই দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করতে হয় এবং এভাবে থাকাকেই সুখে থাকা বলে।
এছাড়া এ ধরণের যুগলদের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ সমস্যা হলো তারা একা হয়ে যাওয়া নিয়ে খুব বেশী ভয় পায়। তাই তারা নিজেরা নিজেদেরকে অবচেতন মনেই বারবার বুঝাতে থাকে যে, তাদের দাম্পত্য জীবন খুবই স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে চলছে।
অনেক সময়ই একজন জীবনসঙ্গী অপর জীবনসঙ্গীর তুলনায় বিবাহিত জীবন নিয়ে বেশী সুখী থাকেন। যেমন, স্ত্রী হয়তোবা ভাবছেন সে একটি তিক্ত সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু তার স্বামী ভাবছেন এই ধরণের সম্পর্কের নামই ভালোবাসা।   
ফলত, স্ত্রী যখন নিজের ভিতরের তিক্ততা দূর করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তখন স্বামী ভাবেন তার জীবনসঙ্গী হয়তোবা তাকে ভালোবাসেনা। এটি অনেক বড় একটি সমস্যা হয়ে দাড়ায়। এতে হয়তোবা স্ত্রী নিজের কাজ করার কারণে অথবা পরিবারের অন্যান্য সদস্য বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগ রাখার কারণে ক্রমাগত নিজেকে অপরাধী হিসেবে ভাবতে শুরু করে। তখন সে হয়তোবা তার স্বামীকে সবসময় বলে "তুমিই একমাত্র ব্যক্তি যার উপর আমি বিশ্বাস রাখতে পারি, নির্ভর করতে পারি"। অথচ সে মনে মনে অস্থির হতে থাকে এবং পরবর্তীতে এ ভার বহন করা তার জন্য অনেক কঠিন হয়ে যায়।  
আপনার জীবনসঙ্গী এবং আপনার মাঝে এ ধরণের সম্পর্ক আছে কিনা তা বুঝার জন্য নিচের কথাগুলো মিলিয়ে নিতে পারেন- 
এক. যখন আপনি আপনার জীবনসঙ্গী এবং নিজের আবেগ ও অনুভূতিগুলোর মাঝে পার্থক্য বের করতে ব্যর্থ হবেন।
দুই. যখন আপনি অথবা আপনার জীবনসঙ্গী অপরজনের আবেগ ও অনুভূতিগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য উদগ্রীব হয়ে যাবেন।

তিন. যখন কোনো ব্যক্তির জীবনে তার জীবনসঙ্গীর জন্য একান্ত আবেগের কোনো সময় বা জায়গা থাকবেনা।  
চার. যখন জীবনসঙ্গী ছাড়া অন্য কারো সাথেই দৃঢ় সম্পর্ক থাকবেনা।

জীবনসঙ্গীর কাছে আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করুন  

দ্বিতীয়ত, সম্পর্কের তিক্ততা দূর করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হলো নিজেদের অনুভূতি ও পর্যবেক্ষনগুলো জীবনসঙ্গীকে জানানো এবং একটি সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্কের জন্য কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন তা জীবনসঙ্গীর কাছে তুলে ধরা ।  
এ আলোচনাটি বিভিন্নভাবে হতে পারে। এ সময় খোলামেলাভাবে নিজের সমস্যার ক্ষেত্রগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত। যেমন কেউ হয়তো বললো আমার নিজের জন্য একান্ত কিছু সময় চাই, নিজের একটা জায়গা চাই। তাহলে তার জীবনসঙ্গী হয়তো বুঝতে পারবেনা কোন ধরণের সময় সে চাইছে। কিন্তু সে যদি নির্দিষ্ট করে বলে যে- সৃজনশীল কোনো কাজ করার জন্য, সামাজিক কাজ বা আধ্যাত্মিক কাজের জন্য অথবা বুদ্ধিবৃত্তিক বা চিন্তাশীল কাজের জন্য সময় প্রয়োজন;  তাহলে তার জীবনসঙ্গীর জন্য কাজের সুযোগ করে দেয়ার ক্ষেত্রটি সহজ হবে।

                                                                                              পরের পর্ব আসছে...



আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

Related Posts

Facebook