ইসলামিক ইতিহাস

ইসলামে একজন নারীর স্থান কতটা? নুসাইবা বিনতে কা'অাব (রা) ছিলেন ইসলামের প্রথম নারী যোদ্ধা

ঐসব নারীবাদীরা কোথায়??
তারা কি জানে না? ইসলামে একজন নারীর স্থান কতটা?
নুসাইবা বিনতে কা'অাব (রা) ছিলেন ইসলামের প্রথম নারী যোদ্ধা, যিনি নবী কারীম সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পাশে থেকে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন।

মাত্র দুজন নারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে সরাসরি কালিমার শপথ গ্রহণ করেন। তিনি সম্ভ্রান্ত, সাহসী ও ছকে বাঁধা চিন্তাধারা থেকে মুক্ত একজন সপ্রতিভ নারী ছিলেন, যিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, নতুন একটি ধর্ম রক্ষা করার জন্য মুসলিম নারীদেরও ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। তাই তিনি বিভিন্ন যুদ্ধের ময়দানে সশরীরে উপস্থিত থাকতেন।
তিনি উহুদ, আল আকাবাহ, আল হুদাইবিয়া, খায়বার, হুনাইন, ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে উহুদের যুদ্ধে তিনি যেভাবে মানব বর্মের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যেভাবে রক্ষা করেন তা ছিল নারীদের জন্য এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।
উহুদের যুদ্ধের শুরুর দিকে তিনি অন্যান্য নারীদের মতো তৃষ্ণার্ত সৈন্যদের জন্য পানি আনা নেওয়া এবং আহত সৈনিকদের সেবা যত্ন করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। যুদ্ধের ফলাফল যখন মুসলিমদের পক্ষে তখন সৈনিকেরা মহানবী সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অমান্য করে বসলো।
ফলে জয় পরাজয় এ রূপ নিতে লাগলো। লোকজন নিজেদের জীবন বাঁচানোর তাগিদে ছুটোছুটি করতে লাগলো। এমনকি মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অরক্ষিত হয়ে পড়লেন।
এমন সময় নুসাইবা (রা) এক  হাতে তরবারি এবং অন্য হাতে ঢাল নিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে এগিয়ে আসলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাফেরদের তীরের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে থাকা ছোট্ট দলটির সাথে তিনি অংশগ্রহণ করলেন।
নুসাইবা (রা) একজন কাফের দ্বারা ঘাড়ে মারাত্মকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার পরও যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলেন না। বরং যতবার যতদিক থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর আক্রমণ এসেছে তিনি সেদিকেই তা প্রতিহত করার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি লক্ষ্য করেন এবং পরবর্তীতে বলেন: আমি ডানে বামে যেদিকেই তাকিয়েছি , দেখেছি নুসাইবা আমার জন্য লড়াই করে চলেছেন। তিনি অনেক পুরুষ যোদ্ধাদের থেকেও ভালো লড়াই করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি (সা) আল্লাহর নিকট নুসাইবার জন্য দুআ করে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি নুসাইবা এবং তার পরিবারকে জান্নাতে আমার সঙ্গী বানিয়ে দাও।এই দুআ শুনে নুসাইবা বলে উঠলেন, দুনিয়ার কোনো কিছুতেই আমার কিছু যায় আসে না। এভাবেই ইসলাম আর তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রক্ষার বিনিময়ে তিনি ইহলৌকিক কোনো কিছু প্রত্যাশা করেন নি বরং পরলৌকিক লাভকে প্রাধান্য দিয়েছেন। উহুদের যুদ্ধে তিনি ১৩ জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং তার ঘাড়ের আঘাত সারতে ১ বছর সময় লাগে। এর পরেও তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন না। ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি ১১ স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং একটি হাত হারান।নুসাইবা (রা) উমর ইবনুল খাত্তাব এর খিলাফত কাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। সাহাবীরা (রে) সবাই তাকে তার সাহসিকতার জন্য অত্যন্ত সম্মান করতেন। একবার উমর (রা) এর নিকট বাইরের দেশ থেকে একটি উপহার আসে। উপহারটি ছিল মূলত রেশমের তৈরি মূল্যবান এক টুকরো কাপড়। উপস্থিত সাহাবীরা (রে) তাকে তার কন্যা অথবা পুত্রবধূকে পাঠানোর পরামর্শ দিলেন। উমর (রা) দুই টি প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, উপহারটির দাবীদার কেবলমাত্র একজন নারী এবং তিনি হলেন নুসাইবা। অতঃপর তিনি তা নুসাইবা (রা) এর কাছে পাঠিয়ে দেন।নুসাইবা (রা) কোনো সৌন্দর্য সর্বস্ব কিংবা দুর্বল ব্যাক্তিত্বের নারী ছিলেন না। তিনি ছিলেন ক্ষিপ্রতার সাথে তরবারি চালাতে সক্ষম একজন অকুতোভয় যোদ্ধা, যিনি মাথা উঁচু করে যুদ্ধ করে গেছেন ইসলামকে রক্ষা করার জন্য। তার এই অবদান এখনও তাকে ইসলামের ইতিহাসে এক সন্তন্ত্র মর্যাদার আসনে আসীন করে রেখেছে।


আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

Related Posts

Facebook