ইসলামে নারী

বিশ্বাসী নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি কে নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।

"সত্য বলতে লজ্জা নেই"

পুরুষ যেন নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়, এভাবেই নারীকে সৃজন করা হয়েছে। নারীদেহের গড়নের প্রতি পুরুষের দুর্বলতা আছে। পুরুষের গড়নের প্রতিও নারীর দুর্বলতা আছে, এটা সিস্টেম।

একটা মেয়ের শরীরের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আলাদাভাবে ও সামষ্টিকভাবে সিম্বলিক হতে পারে।
আপনার কলিগ বা সহপাঠীদের মাঝে এমন কেউ আছে কি না যে আপনার হাতের সৌন্দর্য নিয়ে ফ্যান্টাসিতে আছে, তা আপনি আসলেই জানেন না। কেউ চুল নিয়ে, কেউ চোখ নিয়ে, বা কেউ পুরো আপনাকেই নিয়েই অন্ধকুঠূরিতে কোন পর্যায়ে আছে, তা জানার কোন উপায়ই নেই। তাই আপনি যদি যেকোন মানসিকতার পুরুষের কাছে উদ্দীপক না হতে চান তাহলে সর্বপ্রথম পুরুষের আকর্ষণের কেন্দ্রীয় তিন অংশ আপনাকে ঢেকে ফেলতে হবে, ‘বালিঘড়ি’ শেপকে ও waist-to-hip ratio-কে অস্পষ্ট করে দিতে হবে। এমন একটা পোষাক গায়ে চড়াতে হবে যাতে কোন উঁচুনিচু বুঝা না যায়।

কুরআন আমাদের তা-ই জানাচ্ছে:
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আল আহযাব: ৫৯)

“বিশ্বাসী নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি কে নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যা সাধারণতঃ প্রকাশ তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের মাথার কাপড় দ্বারা বক্ষস্থল আবৃত রাখে। এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগন, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”(সূরা আন নূরঃ ৩১)

এখন আপনি কেমন আবরণ দ্বারা নিজেকে আবৃত করবেন। আচ্ছাদন কেমন হলে তা আপনাকে উদ্দীপকের ভূমিকা নেয়া থেকে সুরক্ষা দেবে। এখন আমরা যে আলোচনায় যাচ্ছি, এর সাথে ফিকহের কোন সম্পর্ক নেই। এই আলোচনা গ্রহণ বা বর্জন আপনার নিজের ইচ্ছে। ইসলাম আমাদের নিচের সিদ্ধান্তের অনেক কিছুরই অনুমোদন দেয়, নিষেধ করে না।

আপনি কেমন আবরণ দ্বারা নিজেকে আবৃত করবেন?

১. বোরকা অনুজ্জ্বল রঙের হবে। কালো বেস্ট। কারণ কালো রঙ আলোর পুরোটুকু শুষে নেয়। তাই কালো বস্তু থেকে দর্শকের চোখে আলো আসে না। নজর কাড়ে না। কালো না হলেও কালো জাতীয় (নেভী ব্লু, ধূসর)। মোটকথা ম্যাদামারা রঙের হওয়া চাই। উজ্জ্বল রঙ হলুদ-লাল-নীল-গোলাপী রঙ ভিজুয়াল ফিল্ডে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। এমন রঙের বোরকা ‘বোরকার উদ্দেশ্য’ পূরণ করে না।

২. প্রচলিত বোরকার কাপড় একটা আছে সিল্কের মত চকচকে। কালো হলেও চকচকে জিনিস আলো প্রতিফলন করে। তাই, ভিজুয়াল ফিল্ডে যেকোন চকচকে বস্তু নজর কাড়ে। এমন কাপড়ের বোরকায়ও উদ্দেশ্য পূরণ হয় না।

৩. একটা কাপড়ের নাম বিএমডব্লিউ, হালে বেশ জনপ্রিয়। এই কাপড়ের সমস্যা হল বেশি আন্দোলিত হয়। ভিজুয়াল ফিল্ডে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি নড়াচড়ার দিকে দৃষ্টি চলে যায়। ফলে উদ্দীপকতা কমাতে বা নিজেকে দৃষ্টির অলক্ষ্যে রাখতে এজাতীয় বোরকাও অনুপযোগী।

৪. বোরকার উদ্দেশ্য হল, আপনার নিচের সুন্দর পোশাক, যেটা আপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে- সেটা ঢাকা। যাতে আপনি কারো দৃষ্টি আকর্ষক না হন। যেহেতু কে আপনাকে দেখে কি ভাবছে, কী ডোজ নিচ্ছে, কী কল্পনা করছে আপনি জানেন না। ডিজাইনওয়ালা আর নানান ফ্যাশনেবল বোরকা তো সেই সৌন্দর্য্যবর্ধকই হয়ে গেল। তাহলে শুধু শুধু ডবল পোশাক পরে কী লাভ হল? কেউ যদি আপনাকে বলে- বাহ এই বোরকায় তো তোমাকে দারুণ মানিয়েছে। বা, চমৎকার লাগছে তোমাকে। তাহলে সেই বোরকা পরা অনর্থক। কারণ আপনি তো সুন্দর লাগার জন্য বোরকা পরছেন না, বরং সৌন্দর্য্য ঢাকার জন্যই সেটা পরার কথা।

৫. অর্ধসচ্ছ শিফন/জর্জেট জাতীয় কাপড়ের বোরকা পরার চেয়ে না পরাই তো ভাল। শুধু শুধু গরমে দুই স্তর সিনথেটিক কাপড় পরার কী দরকার। পর্দার উদ্দেশ্যও পুরা হল না, আবার গরমে কষ্টও হল। আর মানুষের স্বভাব হল কৌতূহল। যা স্পষ্ট দেখা যায়, তার চেয়ে যা আবছা দেখা যায়, তার প্রতি কৌতূহল বেশি কাজ করে। ফলে অর্ধস্বচ্ছ বোরকা আপনাকে আরও বেশি নজর আহ্বানকারী করে তুলবে।

৬. বোরকার কোমরের কাছে ফিতা যদি বেঁধে নেন, তবে বোরকা পরার উদ্দেশ্য ব্যাহত হল। বোরকার উদ্দেশ্য ছিল আপনার দেহকাঠামোকে অস্পষ্ট করে দেয়া। ফিতা বেঁধে কোমরের মাপকে প্রকাশ করে সেই গড়নকে আপনি স্পষ্ট করে দিলেন।

৭. হাল আমলের বোরকার ফ্যাশন হল ঘের অনেক বেশি রাখে গাউনের মত। সেদিন এক ফেসবুক পেইজ যারা দাবি করে যে তারা শারঈ বোরকা বিক্রি করেন। দেখলাম লিখেছে, “ঘের অনেক বেশি…You will feel like a princess”। মানে হল, রাজকন্যারা যেমন গাউন পরে সেরকম। বেশ
নিজেকে নিজে রাজকন্যা মনে হলে তো সমস্যা নেই। কিন্তু রাস্তার লোকে রাজকন্যা মনে করে চেয়ে থাকলে তো সমস্যা। পর্দার উদ্দেশ্য পুরা হল না। আর অতিরিক্ত কাপড় থাকলে তা হাঁটার সময় আন্দোলিত হবে বেশি, ফলে ফোকাস টানবে বেশি।

৮. আর একটা ফেব্রিক সম্পর্কে বলে আমাদের এই আলোচনা শেষ করব, যেটা এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। লন কাপড় পরতে আরামদায়ক হলেও শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে বেশি। ফলে বাইরে থেকে শরীরের অবয়ব স্পষ্ট ফুটে ওঠে। যদিও আপনার পোশাকটা ফিটিং না, বা স্বচ্ছ না। আপনি ভাবছেন সব তো ঢাকাই, আসলে কাপড় লেপ্টে থেকে সব অবয়ব বুঝিয়ে দিচ্ছে।
আবু ইয়াযীদ মুযানী রাহ. বলেন, হযরত ওমর রা. মহিলাদেরকে কাবাতী (মিসরে প্রস্ত্ততকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা বলল, এই কাপড়ে তো ত্বক দেখা যায় না। তিনি বললেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫২৮৮

তাহলে কেমন বোরকা পরলে উদ্দীপক হিসেবে আমার ভূমিকা মিনিমাম হবে?
১. নিকাবসহ কালো বা কালো জাতীয় রঙের
২. সুতি ধরনের কাপড় যা অতিরিক্ত দুলবে না, লেপ্টে থাকবে না। বরং কিছুটা ফুলে থাকবে, বডি শেপকে অস্পষ্ট করে দেবে। কাপড় সুতি হলে সিনথেটিক এসব কাপড়ের চেয়ে আরামও পাবেন বেশি। আরেকটা ব্যাপার আছে। সুতি কাপড় ইস্ত্রি নষ্ট হয়ে পরিপাটিভাব থাকে না, ফলে আপনার দিকে কেউ লক্ষ্যই করবে না, চোখ পড়লেও অনীহাভরে সরিয়ে নেবে। বোরকা পরার মূল উদ্দেশ্য সবচেয়ে সুন্দরভাবে পূরণ হবে।

Collected from 'Online Media'





আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

Related Posts

Facebook