333

হতাশা কেন তারা? ( লিখেছেন আরিফুল ইসলাম)

হতাশা কেন তারা?

লিখেছেন আরিফুল ইসলাম

‘হতাশা কাটানোর জন্য মানুষ ডেল কার্নেগীর বই পড়ে। সেই ডেল কার্নেগী হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় আত্মহত্যা করেন!’

কথাটি প্রথম যখন শুনি তখন যারপরনাই বিস্মিত হই। এটা কেমন কথা? যেই মানুষটি ‘How to Stop Worrying and Start Living’ এর মতো আত্ম-উন্নয়নমূলক একটি বইয়ের লেখক, সেই মানুষ হতাশায় আত্মহনন করেছেন?

ইন্টারনেটের সাগড়ে ডুব দিলাম। ভাসা-ভাসা নিউজ পড়ে আরো বেশি কনফিউজড হয়ে গেলাম। ডেল কার্নেগী সুইসাইড করেছেন কি করেন নি এটা নিয়ে অনেকেই ধুয়াশার মধ্যে আছেন। বিভিন্ন সাইটে পক্ষে-বিপক্ষে লেখা আছে। শেষ পর্যন্ত কনক্লুশনে পৌঁছলাম, ডেল কার্নেগী আসলে সুইসাইড করেননি, তার সুইসাইড করার ঘটনাটি একটা ‘জনপ্রিয় গুজব’।
..
মানুষের হতাশা দূর করাকে যারা নিজেদের ক্যারিয়ার হিশেবে বেছে নিয়েছিলেন, এরকম অনেকেই জীবনের কোনো এক পর্যায়ে নিজেরা হতাশাচ্ছন্ন হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অ্যামেরিকার একটা জনপ্রিয় রেডিও প্রোগ্রাম ছিলো ‘The Pursuit of Happiness’. প্রোগ্রামটির এঙ্কোর ছিলেন জন লিট্টিগ এবং লিন রোজেন। এই দম্পতি তাদের প্রোগ্রামটির মাধ্যমে মানুষকে স্বপ্ন দেখাতেন কিভাবে সুখী জীবনযাপন করা যায়। তারা তাদের শ্রোতাদের লাইফ-লেশন দিতেন। হতাশাচ্ছন্ন মানুষকে নিয়ে কাজ করা এই দম্পত্তি শেষপর্যন্ত নিজেরা সুইসাইড করেন!
..
আমাদের প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি সমস্যা ইউনিক। একজনের সমস্যার সাথে আরেকজনের সমস্যায় মিল নেই। জীবনের সমস্যা মোকাবেলায় কেউ ডোবায় ডুবে যান, কেউ সাঁতার কেটে পার হন খরস্রোতা নদী। একজনের সমস্যা আরেকজনের কাছে যতোটা তুচ্ছ মনে হয়, সমস্যাগ্রস্ত লোকটির কাছে তার সমস্যা ততোটা তুচ্ছ নয়।

পরীক্ষার হলে একজন শিক্ষার্থীর সবগুলো প্রশ্ন কমন পড়তে পারে আবার না-ও পড়তে পারে। কারো পঞ্চাশ মার্কের প্রশ্ন কমন পড়বে, কারো আশি মার্কের। যে ছাত্রের পঞ্চাশ মার্কের প্রশ্ন কমন পড়লো সে যদি ‘কেন আমার একশো মার্কের প্রশ্ন কমন পড়লো না? আমি আর পরীক্ষা দেবো না’ – বলে প্রশ্ন-উত্তরপত্র ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যায় সে কি পরীক্ষায় পাস করতে পারবে? পারবে না। উল্টো পরীক্ষার হলে নিয়ম ভঙ্গ করার জন্য তার শাস্তি হবে।

আমাদের জীবনটা হলো এরকম পরীক্ষার হল। মাঝেমাঝে আমাদের ইচ্ছেমতো সবকিছু পেয়ে যাবো, মাঝেমাঝে পাবো না। মুটিভরে যখন সবকিছু পেয়ে যাবো তখন সবকিছু পাবার আনন্দে আমরা কতটুকু আল্লাহকে স্মরণ করবো, তার শোকর করবো- এটা হলো আমাদের পরীক্ষা। আবার যখন ইচ্ছেমতো সবকিছু পাবো না, জীবনটা আমাদের ইচ্ছেমতো চলবে না তখন আল্লাহকে কতটুকু স্মরণ করবো, ধৈর্যধারণ করবো- এটা হলো আমাদের পরীক্ষা।

জীবন সম্পর্কে যখন এই উপলব্ধি থাকবে না, তখন আত্মহত্যা হয়ে যায় জীবনের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান। এই আত্মহত্যা হলো পরীক্ষার হলে সবগুলো প্রশ্ন কমন না পড়ায় প্রশ্নপত্র-উত্তরপত্র ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলার মতো।

মুমিনের জীবনের একটা লক্ষ্য আছে। এই লক্ষ্য অর্জনের পথে টর্নেডো আসবে, জলোচ্ছ্বাস এসে তাকে বিলীন করে দিতে চাইবে। এসব বাধার কাছে একজন মুমিন আত্মসমর্পণ করে আত্মহনন করে না। তার জীবন তো এতোটা তুচ্ছ নয়! আশা এবং ভয়, এই দুটো নিয়ে সে চলতে থাকে তার লক্ষ্যপানে। মনে মনে জপতে থাকে কুর’আনের একটি আয়াত- নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে।


আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

Related Posts

There is no other posts in this category.

Facebook