'সুনির্দিষ্টভাবে কদরের রাত কোনটা' সেটা নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হয়েছিলো। কদরের রাত হচ্ছে সেই রাতটাই, যেদিন সর্বপ্রথম কুরআন নাযিল হয়। কিন্তু, কদরের সঠিক রাত কোনটা, মানে, রামাদান মাসের কোন বিশেষ রাতে কুরআন সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছিলো, তা নবিজীরও অজানা ছিলো। কিন্তু পরে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা জানান, এবং নবিজী তা মানুষকে জানানোর জন্যে বের হোন।
কদরের বিশেষ রাতটা মানুষকে জানাতে এসে নবিজী দেখলেন, কিছু মানুষ প্রচন্ড তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে আছে। তর্ক-বিতর্কটা সম্ভবত কোন রাতটাই কদরের রাত, তা নিয়ে। তাদের তর্ক-বিতর্ক দেখে থমকে যান নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এবং তখন, নবিজীর স্মৃতি থেকে কদরের রাত বিষয়ক জ্ঞানটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা মুছে দিলেন। মানে, মুহূর্তেই নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভুলে গেলেন যে কোন রাতটা কদরের রাত হিশেবে তাকে জানানো হয়েছিলো। তবে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আমরা এতোটুকু জ্ঞাত হয়েছি, রামাদানের শেষ দশ রাত, আরো সুনির্দিষ্টভাবে বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে যেকোন এক রাত-ই হলো সেই পবিত্র রজনী।
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, অহেতুক তর্ক-বিতর্ক দিনশেষে ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। ওইদিন ওই লোকগুলো তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত না হলে, উম্মাহ হয়তো সেদিনই নিশ্চিতভাবে জেনে যেতো যে, কোন বিশেষ রাতটাই কদরের রাত। অবশ্য, না জানতে দেওয়ার পেছনেও আল্লাহর হিকমাহ আছে। যদি আমরা জেনেই যেতাম সুনির্দিষ্টভাবে, তাহলে কদরের রাত খোঁজার জন্য শেষ দশ রাতে ইবাদাতে মগ্ন হওয়ার যে বিশেষ তাড়না, তা আমাদের মধ্যে আর থাকতো না। আমরা কেবল ওই একদিনই ইবাদাত করতাম।
কদরের রাতের ফযিলাত যে কি পরিমাণ, তা বলে কোনোভাবে বুঝানো সম্ভব না। সেই রাত যারা পায়, তারা সবিশেষ সৌভাগ্যবান। এমন এক রাত, যাকে কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা এখানে 'হাজার' মাস বলেছেন। কতো হাজার মাস সেটা নির্দিষ্ট করে বলেন নি। আর, বান্দার ওপর আল্লাহর রহমত যখন নাযিল হয়, তখন তার পরিমাণ যে কতো বিশাল হয়ে দাঁড়ায়, তা আমাদের জ্ঞানে বুঝে উঠা মুশকিল।
চলুন, তালাশ করি এই রাত। শেষ দশ দিন চলে এসেছে আমাদের সম্মুখে। এই রাতগুলোতে আমরা নিমগ্ন হই আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদাতে। কেবল বেজোড় রাতের জন্য অপেক্ষা না করি আমরা। রামাদান মাস তো মহা পবিত্র এক মাস। এই মাসের প্রতিটা সেকেন্ড-ই যে খুব গুরুত্বপূর্ণ!
আরিফ আজাদ
©সিরাতাল মুস্তাকিম

লেখক: 
