- 'কি করছো তুমি এটা? কী রান্না করলা এটা বলো? গলা উঁচু করে জোর আওয়াজে রান্নাঘরের দিকে মুখ করে জিজ্ঞাসা করলো স্বামী। কানে আওয়াজ যাওয়ার সাথে সাথে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে আসলো স্ত্রী।
- 'কি রান্না করেছি? ভাল হয়নি একটুও? আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বললো স্ত্রী।
- 'আজকেও নিশ্চয়ই তুমি চামচ ভরে তরকারির ঝোল উঠিয়ে আঙ্গুলের ডগায় একফোঁটা ঝোল নিয়ে লবণ চেক করে বাকি ঝোলটুকু আবার পাতিলে রেখেছো?
স্ত্রী মুখ বন্ধ করে মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। আর ভাবছে রান্না খারাপ হলে তো এরকম করেনা কখনো। তবে কি আজকে একটু বেশীই খারাপ হয়েছে?
চোখেমুখে বিরক্তিভাব এনে স্বামী বললোঃ 'উফফ! তোমাকে কতবার মানা করি এরকম করবানা, তবুও তুমি শুনোনা। তরকারিটা একদম মিষ্টি হয়ে গেছে। এত মিষ্টি তরকারি খাওয়া যায় নাকি? আমি জানতাম তোমার হাত লাগা ছাড়া কোন কিছুতেই এত মিষ্টি হওয়ার কথা না। বলেই চোখ নামিয়ে খাওয়ায় মন দিলো। মিনমিনে ভাব ছাপিয়ে আস্তে আস্তে রণমূর্তি ধারণ করে কটমট করে 'ঢং দেখে আর বাঁচিনা' বলেই রান্নাঘরে চলে গেলো স্ত্রী। এদিকে স্বামী মিটিমিটি হাসছে আর ভাবছে চোখেমুখে রাগ দেখালেও পাগলিনী এবার কাজ করবে আর একা একাই হাসবে।
ক্ষণিক বাদেই স্বামী আবার ডাক দিলো স্ত্রী'কে। কিছু লাগবে ভেবে স্ত্রী দৌড়ে এলেন। আসতে না আসতেই কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো, 'তুমি তো আমার ভাল চাওনা কখনো। আচমকা এমন কথা শুনে স্ত্রী বললো 'এমনটা কেন বলছেন? আপনার ভালো'ই তো আমার ভালো।
স্বামী আবার জিজ্ঞাসা করলো স্ত্রীকে, 'তুমি কি চাওনা আমি স্লিম হয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করি? প্রশ্ন শুনে মাথা নেড়ে সায় দিলো স্ত্রী। 'তুমি কি চাওনা আমি ডায়েট কন্ট্রোল করি? স্ত্রী আবারও মাথা নেড়ে সায় দিলো। 'তাহলে এত মজা করে কেন রান্না করো? একটু কম মজা করবা। খেতে বসে এত মজার খাবার রেখে আমি উঠতেই পারিনা। শোনো! কাল থেকে রান্নায় তিন চামচ ভালবাসা দিবা গুণে গুণে। এটুকু বলে বিড়বিড় করার ভঙ্গিতে বললো, ধুরর আমার আর স্লিম হওয়া হলোনা। 'তা শুনি রান্নায় মানুষ ভালবাসা চামচ দিয়ে মেপে কিভাবে দেয়? শিখান একটু আমাকে। শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুঁজতে গুঁজতে বললো স্ত্রী।
- 'এই যেমন এখন রান্না করার সময় মনে মনে বলো' আল্লাহ! অনেক মজা হয় যেন। তো কাল থেকে এরকম না বলে বলবা এক চামচ ভালবাসা, দুই চামচ ভালবাসা, তিন চামচ ভালবাসা। ব্যাস! পর্যাপ্ত পরিমাণ মজা হয়ে যাবে এটুকুতেই। বলেই দুষ্টুমির একটা হাসি দিয়ে আড় চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে স্ত্রীর ভাব পর্যবেক্ষণ করে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
চুপিচুপি মৃদু তৃপ্তিকর একটা হাসি দিয়ে বললো, 'এসব বলার জন্যই আমাকে একটু পরে পরে ডাকছেন? এবার মুখটা মলিন করে চোখে অজস্র মায়া নিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললোঃ 'মুহতারামাহ! খাওয়ার সময় আপনি পাশে না থাকলে আমি কয়েক গামলা খেয়েও তৃপ্তি পাইনা। রান্নার সময় আপনার কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুক্তোর দানার মত চিকচিক করে, তা দেখার লোভ আমি সামলাতে পারিনা। আগুনের তাপে আপনার মুখটা গোলাপি আভায় টুকটুকে বউয়ের মত লাগে।
সুখকর একটা প্রসন্ন মুচকি হাসি দিয়ে স্ত্রী বললোঃ 'কাজের সময় ও এত সুন্দর লাগে বুঝি? খাবারের একটা লোকমা স্ত্রীর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো 'আপনাকে সর্বাবস্থায়'ই হুরীর মতো লাগে। আপনি যে আমার অর্ধাঙ্গিনী।
(বিঃ দ্রঃ স্ত্রীর সব ভাল কাজে একটু আধটু প্রশংসা করুন। যতটুকু না তারচেয়েও কয়েক লাইন বাড়িয়ে বলুন। পরেরবার যত্ন কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ভালবাসা অপরিসীম হবে। সুখময় হোক প্রত্যেকটা আসমানী বন্ধন।)
প্রযত্নেঃ সাদিয়া আফরিন

লেখক: 
