Relationship,
অতঃপর ইত্যাদি, ইত্যাদি.........
লেখাঃ আলিজা বিনতে কাদের
.
(শুরুতেই আপনাদের জন্য থাকছে ৩টি গল্প।
অনিচ্ছাকৃতভাবে পোস্টটি বড় হয়ে গেল। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ। )
[ক]
.
দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আপনাদের। দুজন দুজনের ছায়াটুকুও চিনে নেন এক দেখাতে!
বাবা-মা আত্মীয় স্বজন সকলেই জানেন আপনাদের সম্পর্কের কথা।
উভয়ের পরিবারেই গুঞ্জন চলে আপনাদের নিয়ে।
আপনাদের ভালোই লাগে পরিবেশটা।
কিন্তু রব আপনাকে সৃষ্টি করেছেন অন্যকারো জন্য!
আপনি কি মনে করেন আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটিকেই স্বামী/স্ত্রী রূপে পাবেন?
যদিও বিষয়টি স্পষ্ট যে আপনি জানেন রব এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনি এই সম্পর্কের পরিনতি পাবেন না।
তবুও আল্লাহর কাছে খুব করে চাইবেন তাকেই, যাকে আপনি বেছে নিয়েছেন।
অতঃপর একদিন,
সম্পর্কটি ঠুনকো বিষয়ের জের ধরে ভেঙে গেলো।
আপনি চাইলেও সে চাইছে না, এই সম্পর্ক থাকুক।
আপনি খুব করে চান তিনিও সেটাই অনুভব করুক, যা আপনি অনুভব করছেন।
এইতো কিছুদিন আগেও সম্পর্কটা কতো সুন্দর ছিল, আপনাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো।
আর এখন? সে খোঁজটুকুও নিচ্ছে না আপনি কেমন আছেন।
শুরু হয়ে গেল মানবেতর জীবনযাপন।
সম্পর্কের সূচনায় যেই সুখানুভূতি পেয়েছিলেন, উপসংহারে তার চেয়েও বেশি দুঃখ কষ্ট আপনাকে ঘিরে ধরেছে।
কি হতো যদি সে সম্পর্কটাকে আগের মতোই মুল্যায়ন করতো?
.
অতঃপর আপনার অথবা তার বিয়ে হয়ে গেল!
আপনি স্বপ্নে ফিরে গেলেন,দেখলেন তার সঙ্গেই আপনার থাকার কথা ছিলো। কিন্তু আজ সে অন্য কাউকে নিয়ে সংসার করছে।
আর আপনি আজ অন্যকারো!
.
কি ভালো লাগছে না তাই না?
ভালো না লাগারই কথা।
._______________________
এবার চলে যাই ২য় গল্পে!
.
[খ]
আপনার স্বামী/স্ত্রী -পরনারীর/পুরুষের সঙ্গে আলাপে মগ্ন!
আপনি আপনার অবস্থান থেকে সকল চেষ্টা করেও ব্যর্থ।
তাকে ফেরানো যাচ্ছে না।
সে ফিরবে ফিরবে বলেও ফিরছে না। যেখানে তার আপনাকে সময় দেওয়ার কথা, সে সময় দিচ্ছে অন্যকাউকে।
আপনি স্ত্রী/স্বামী হয়েও নিরুপায়!
.
এবার আপনার সন্তানদের মনের বেদনা শুনুন–
আমার বাবা/মা আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না।
অন্যকাউকে আমার বাবা/মা সময় দিচ্ছে।
সুন্দর সুন্দর কথা বলছে, বাসায় বাবা মায়ের মাঝে প্রচন্ড কথা কাটাকাটি চলে।
আমাদের কি হবে?
মা/বাবাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমরা?
কি হতো যদি বাবা-মা আমাদের নিয়েই থাকতেন!
ছিহ!
বাবা/মা এতো খারাপ!
_________________________
এবার আসি ৩য় গল্পে।
.
[গ]
.
এখানে আপনিই নায়িকা/নায়ক,
যে অন্যের স্বামী/স্ত্রীকে ভালোবাসে।
বিবাহের আগে থেকেই আপনাদের সম্পর্ক ছিলো।
কিন্তু তার অসময়ে বিয়ে হয়ে যায়।
তাতে কি!
আপনার চেয়ে বেশি তাকে কেউই সুখে রাখতে পারবে না।
তাকেও ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্বামী/স্ত্রী থাকুক সন্তান থাকুক তাতে কিছুই আসে যায় না।
সে এখনো একান্তই আপনার!
এখন সেও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তার সঙ্গীকে সে ভালোবাসে না।
সে আপনাকেই চায়!
___________________________
গল্পগুলো কি সুন্দর না?
কোনটার মাঝে কি সুখ দেখতে পাচ্ছেন?
.
ক-গল্পে আপনার এক্স এর চিন্তায় আপনার সংসার ঠিক থাকছে না।স্বামী/স্ত্রী নিয়ে সুখী হতে পারলেন না। অতীতের স্মৃতি আপনাকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
.
খ-গল্পে আপনার সঙ্গী অন্যকারো উপর আসক্ত, আপনার ও আপনার সন্তানদের হক্ব সে আদায় তো করছেই না।উল্টো সংসারে অশান্তি ঢেলে দিচ্ছে।
.
গ-গল্পের নায়ক/নায়িকা হলেন আপনি নিজেই। অন্যকারো সংসার ভাঙার চিন্তায় আপনার রাতের ঘুম নেই। কেমন লাগছে আপনার?
নিশ্চয়ই প্ল্যান প্রোগ্রামগুলো আপনাকে স্বস্তি দিচ্ছে না।
তাই না?
একটুও কি নিজের উপর ঘৃনা জন্মায় না? পরনারী/পুরুষ হয়ে অন্য একটা সংসার ভাঙতে?
সমাজের কাছে আপনি একজন ভিলেন বৈ অন্য কিছুই না।
.
গল্প শেষ!
গল্পগুলোর মাঝে লুকিয়ে আছে এক না বলা ম্যাসেজ! একটা না বলা চাপা কষ্ট! দুঃখ আর যন্ত্রণার কিছু ছাপ!
.
এবার মূলপর্বে আসি!
যেই আলোচনার জন্য এতো গল্পের আয়োজন!
বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত ও সর্বস্তরে প্রচলিত সম্পর্কের মধ্যে, একটি সম্পর্ক হলো প্রেম।
দুজন ভিন্ন মানুষের মাঝে আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা থেকেই অদৃশ্য এক টান তৈরি হয়, ভালোলাগা, পছন্দ অপছন্দের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই অদৃশ্য সুতোয় বাধায় সম্পর্ককেই তারা বয়ে নিয়ে যেতে চায় সারাজীবন!
কিন্তু অধিকাংশ সম্পর্কেরই সেই সারাজীবনের বিস্তৃতি হয় ১-২বছর থেকে প্রায় ৫-৬ বছর[ কিছুক্ষেত্রে আরো বেশি ]।
এদের মধ্যে খুব কম সম্পর্কই পরিনতি পেয়ে বিয়ে পর্যন্ত যায়!বাকি গুলোর Love Forever এর দৌরাত্ম্য দুই-চার বছর পর্যন্তই!
এমনকি তা বিয়ে পর্যন্তও গড়ায় না।
.
বছরের পর বছর প্রেম করে, বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে এসে চেনা মানুষের অচেনা আচরণের শিকার হাজারো তরুণ-তরুণী। তখন তারা না পারে মেনে নিতে, না পারে অপরপক্ষের মানুষটিকে তার গুরুত্ব বোঝাতে।
তিল তিল করে জমানো স্বপ্নের বিসর্জন এভাবেই দিতে হয়, এভাবেই অপরপক্ষের কঠোর আচরণের কাছে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় প্রত্যাশা।
.
▪যাদেরকে নিয়ে ঘর সংসার বাধার স্বপ্ন দেখি, তারা ও সেই স্বপ্ন আমাদের মতো করেই দেখে কিনা,
তা কি জানার সুযোগ আছে?
–একটুখানি দেখা করার জন্য হাজারো বাধা বিপত্তি এড়িয়ে, শতশত কাজ ফেলে সমস্ত সময়টুকু আমাদেরকে গুরুত্ব দেওয়াটাই কি প্রমান করে না? যে তারাও সেই একই স্বপ্ন দেখে আমাদের নিয়ে।
তারাও একইভাবে আমাদের সম্পর্কের মূল্যায়ন করে যেভাবে আমরা এই সম্পর্ককে দেখতে চাই।
.
যদি এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে যাই সেক্ষেত্রে বলতে হয়ঃ
– না! প্রমাণ করে না।
দেখা সাক্ষাৎ, ঘোরাফেরা, সেলফি তুলে নিজেদের উত্তম কাপল ভাবা, উপহারের আদান প্রদান এগুলোর কোনটাই নিশ্চয়তা দিতে পারে না যে আপনাদের সম্পর্ক পরিনতি পাবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের কাপল পিক শেয়ার করেও নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই যে এই সম্পর্কগুলি আসলেই স্থায়ী হবে।
ঠুনকো এই সম্পর্কের মায়াজালে নিজেদের আবদ্ধ করে রাখা নিছকই ধোঁকা!
.
▪"কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষটিকে আমি খুব ভালো করে চিনি। সে অন্যদের চেয়ে আলাদা। তার কাছে আমাদের সম্পর্কের মূল্যায়ন অন্যরকম। আমার সকল প্রয়োজন অপ্রয়োজনে সে আমার পাশে থাকে।
তবুও কি এই সম্পর্ক টিকবে না?????"
.
– সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের সুতোয় বাঁধা প্রত্যেকটা মানুষের একের অন্যের প্রতি অদ্ভুত কিছু এক্সপেকটেশন তৈরি হয়। অনেকটা এরকম–
"অমুক আমাকে বোঝে, আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না, সে আমার পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখে, আমার ব্যাপারে সকল খোঁজ খবর নিতে সে তৎপর, আমার প্রয়োজন আমার আগেই সে বুঝে নেয়, তার চ্যাটলিস্টের সবচেয়ে উপরে আমিই থাকি, ছুটির দিনগুলোতে আমিই তার পাশে থাকি, আমার সুবিধা অসুবিধার কথা সে সবসময় মাথায় রাখে। "
এতোগুলো সুন্দর সুন্দর টার্ম এর পরেও সম্পর্কগুলো কিভাবে ভেঙে যেতে পারে?
.
প্রকৃতপক্ষে সম্পর্কের গভীরতা এসব টার্ম দিয়ে মাপা যায় না। হাজারো জাস্টফ্রেন্ড এসব টার্ম ব্যবহার করে। তাদের সম্পর্কের কোন মানে থাকে না। তবুও তারা সম্পর্কে জড়ানো। তবে কি তাদের সম্পর্কও পরিনতি পায়?
.
— পায় না! অমুক অন্য সবার মতো নয় কথাটিই একটা অন্ধবিশ্বাস।
মানুষের স্বভাবজাত বিষয়গুলো ভিন্ন হলেও, রিয়েকশন এর ভিত্তিতে ভিন্ন হলেও একটা সমান স্ট্র্যাকচারে প্রত্যেকটা মানুষ তৈরি।
অনুভূতি প্রত্যাশার দিক থেকে প্রত্যেকেই সমান।
সবাই উচ্চাকাঙ্খী, সবাই উত্তম জীবনযাপন করতে চায়, সবাই বেটার অপশন চায়। এসব টার্ম অস্বীকার করা বোকামি!
.
গল্প ৩টিতে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে কোথাও সুখ নেই।
এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে –"কেন সুখ নেই?"
▪আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের প্রত্যেকের জন্যই নির্ধারিত সঙ্গী রেখেছেন। এই জীবদ্দশায় যার সঙ্গে সারাজীবন কাটবে তাকে মহান রাব্বুল আলামীন সযত্নে আপনার আমার সকলের জন্যই লালন করেছেন। অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যু না থাকলে স্বামী/স্ত্রীর কাছে আমাদের রবই যেতে বাধ্য করবেন।
তখন মহান রবের সন্তুষ্টির মাঝেই শুরু হবে অসাধারণ কিছু প্রেম-ভালোবাসার গল্প। যার মাঝে কষ্ট থাকলেও সুখের অভাব হবে না।
মহান রাব্বুল আলামীনের সেই ইচ্ছার অমর্যাদা করতে গিয়ে আমরা বিবাহ বহির্ভূত এক বা একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে যদি প্রত্যাশা করি যে মহান রব আমাদের জন্য নেককার স্বামী-সন্তান রেখেছেন।
সেটা কি বড় ভুল নয়?
আল্লাহর ইচ্ছার বিরোধিতা করতে যদি আমাদের না-ই বাধে তবে সুখ পাওয়ার জন্য হাহাকার করা কি আমাদের সাজে????
হারামকেও ছাড়তে চাই না কিন্তু সুখও চাই ব্যাপার দুটো পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
(অনেক বেশি বড় হয়ে গেলো লেখাটা!
তবুও যারা কষ্ট করে পড়েছেন আল্লাহ তাদের বোধদয় করুন)
হারামের মাঝে আরাম খুঁজতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিয়েন না!
শেষ করছি আমার একটি পছন্দের আয়াত দিয়ে!
.
“দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য (উপযুক্ত)। (একইভাবে) সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য (উপযুক্ত)। তাদের সম্পর্কে (দুশ্চরিত্র লোকেরা) যা বলে,তা থেকে তারা পবিত্র। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।” (২৪:২৬)
সর্বশেষঃ সূরা নূর এর তাফসির পড়ার প্রতি দাওয়াত রইলো।

লেখক: 
