ইসলামে নারী

অনুপ্রেরণায় উম্মুল মু’মিনীন ‘খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা।

অনুপ্রেরণায় উম্মুল মু’মিনীন ‘খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা।

.

[১]
.

পৃথিবীর বুকে কিছু মহিয়সী রমণীদের আবির্ভাব হয়েছে যাদের তুলনা কেবল তারাই। অসাধারণ তাদের জীবন, অনন্য তাদের আদর্শ, অতুলনীয় তাদের চরিত্র, ফাজায়েল ও মানাকিব তাদের আকাশচুম্বী! তাদের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও তাঁর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তারা নিরংকুশ ভালবাসা, কঠোর পরিশ্রম ও দাসত্বের মাধ্যমে জয় করেছেন স্বীয় রবকে। তারা নিজের জীবনকে ইসলামের জন্য ব্যয় করে গেছেন। সর্বদা আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থেকেছেন। সবর-শোকরের সাথে জীবন কাটিয়ে গেছেন। ক্বুরআনুল কারীমকে সাথী বানিয়েছেন। হাদীস চর্চাকে জীবনের অনুষঙ্গ বানিয়েছেন। সব কিছুই করেছেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।

আজকে আমরা তেমনি একজন মহিয়সী নারীকে নিয়ে আলোচনা করব - যিনি ইসলামের প্রাথমিক যুগের নিবেদিত প্রাণ , শ্রেষ্ঠ জান্নাতি নারী, রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)- এর প্রিয়তমা স্ত্রী, উম্মুল মুমিনীন (মুমিনগণের মা) খাদীজাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। যিনি জান-মাল দিয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পাশে থেকে ইসলামের ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছেন। ইসলামের সূচনালগ্নে অর্থ সম্পদ দিয়ে যিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে সহায়তা করেছেন। তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী।  রাসুল (ﷺ) যখন ইসলাম প্রচারের কারণে মক্কার মুশরিকদের থেকে নির্যাতিত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তখন তিনিই একমাত্র তার পাশে ছিলেন। তিনিই তাকে সাহস উৎসাহ প্রদান করেছিলেন।
.
আল্লাহর রসুল (ﷺ) যখন প্রচণ্ড দু:খ, কষ্ট ও দুর্দশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন তিনিই তার পাশে ছিলেন। প্রচন্ড দুর্ভিক্ষের সময় যখন জীবনধারণের জন্য গাছের পাতা ছাড়া আর অন্য কিছু ছিল না তখনও তিনি স্বামীর সাথে হাসি মুখে সকল কষ্ট সহ্য করে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি রমণীর একজন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন :

عن ابن عباس رضى الله عنه قال خط رسول الله صلى الله عليه وسلّم فى الارض اربعة خطوط قال اتدرون ما هذا؟ فقالوا الله ورسوله اعلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افضل نساء اهل الجنة خديجة بنت خويلد و فاطمة بن محمّد واسية بنت مزاحم امراة فرعون ومريم ابنه عمران رضى الله عنهن رواه احمد ابن حبّان و قال الحاكم وقال الحاكم هذا خديث صحيح الاسناد

"রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন যমীনের উপর চারটি রেখা অংকন করলেন এবং বললেন, এটা কি তোমরা জানো? সাহাবায়ে কেরাম জবাব দিলেন, আল্লাহ্ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, জান্নাতি রমণীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন খাদীজাহ বিনতে খুয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, আছিয়া বিনতে মাযাহেম  (ফেরাউনের স্ত্রী) এবং মরিয়াম বিনতে ইমরান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুন্না)।  --- [আহমদ, ইবনে হিব্বান দ্রঃ ]
.

আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,  রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) বলেছেন, ’মারইয়াম (আঃ) ছিলেন (পূর্বের) নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম নারী। আর খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) (এই উম্মতের) নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ’’।  --- [বুখারী ৩৪৩২, ৩৮১৫; মুসলিম ৬১৬৫-(৬৯/২৪৩০); তিরমিযি ৩৮৭৭; আল লু’লু ওয়াল মারজান ১৫৭৩ ]
.

পবিত্র কুরআন নাযিলের সময় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, তখনকার সময়ে প্রতিদিন খাবার তৈরী করে পর্বতের চূড়ায় পৌঁছে দিতেন এই মহিয়সী নারী। একদা জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম, রাসূলুল্লাহ  (ﷺ)-এর দরবারে এসে বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল ! খাদীজাহ আপনার জন্য তরকারী, খাবার এবং পানীয় ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে আসছে। যখনই আপনার নিকট এসে পৌঁছবে তখনই তার রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার এবং আমার পক্ষ হতে সালাম পেশ করবেন এবং সুসংবাদ দিবেন যে, তার জন্যে রয়েছে জান্নাতে মনিমুক্তা খচিত মহল, যাতে থাকবেনা কোন শোরগোল, আর না থাকবে কোন দুঃখ-কষ্ট। ---- [বুখারী- ৩০৬০, মুসলিম- ২৪৩২]

ভাবা যায়! স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা উনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং জান্নাতের আগাম সুসংবাদ দিয়েছেন।
.

[২]
.
উম্মুল মুমিনীন (মুমিনগণের মা) খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ ধনী ও সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারিণী হিশেবে সেযুগের কাফির, মুশরিকদের কর্তৃক ‘ত্বাহেরা’ (পবিত্রা) নামে খ্যাত। আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর সাথে বিবাহের পূর্বে উনার  দু’দুজন স্বামী মৃত্যুবরণ করেন এবং তাদের সাথে মাত্র কয়েক বছরের সংসার জীবন অতিবাহিত করেন।  স্বামীদ্বয়ের মৃত্যুর পরে তিনি তাদের প্রভূত সম্পদের মালিক হন এবং পরবর্তীতে সমস্ত সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেন।

প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইবনু হিশাম ও আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া-তে আম্মাজান খাদীজাহ ও রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিবাহের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে : "রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মিষ্টভাষিতা, সত্যবাদিতা, আমানতদারী এবং উন্নত চিন্তা-চেতনার কথা শুনে আম্মাজান  খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন। ইতিপূর্বে  দু’জন স্বামী মৃত্যুবরণ করায় মক্কার সেরা নেতৃবৃন্দ তাঁর নিকটে বিয়ের পয়গাম পাঠান। কিন্তু তিনি কোনটাই গ্রহণ করেননি। অত:পর তিনি নিজেই বান্ধবী নাফীসার মাধ্যমে নিজের বিয়ের পয়গাম পাঠালেন যুবক মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কাছে। তখন উভয় পক্ষের মুরব্বীদের সম্মতিক্রমে শাম থেকে ফিরে আসার মাত্র দু’মাসের মাথায় সমাজনেতাদের উপস্থিতিতে ধুমধামের সাথে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় বিবাহের মোহরানা স্বরূপ ২০টি উট প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, রাসুল (ﷺ) ছিলেন খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার তৃতীয় স্বামী। অন্যদিকে খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন মুহাম্মাদ (ﷺ) এর প্রথমা স্ত্রী"। --- [ ইবনু হিশাম ১/১৮৭-৮৯; আল-বিদায়াহ ২/২৯৩-৯৪ ]
.

সহধর্মীনী হিশেবে সুখেদুখে সর্বাবস্থায় রাসূল (ﷺ)-এর পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নব্যুওয়াতপ্রাপ্তির পর আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) তাঁকে কী বলে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন দেখুন :

فَقَالَ: زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ، فَقَالَ لِخَدِيجَةَ وَأَخْبَرَهَا الخَبَرَ: لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي فَقَالَتْ خَدِيجَةُ: كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الكَلَّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ،

‘অতঃপর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত্ত করো, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত্ত করো। তাঁর পরিবার তাঁকে চাদর দ্বারা আবৃত্ত করলেন। এক পর্যায়ে তাঁর শংকা দূর হলো। তখন তিনি খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকট ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে বললেন, আমি আমার প্রাণের ব্যাপারে শংকাবোধ করছি। জবাবে খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, আল্লাহর কসম, কখনোই নয়। আল্লাহ্ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করেন, অসহায় দুঃস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং দুর্দশাগ্রস্থকে সাহায্য করেন। --- [ স্বহীহুল বুখারী: ৩ ]।
.

[৩]
.

সালাফদের যুগ থেকেই রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শ্রেষ্ঠ স্ত্রী কে এবং তিনি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন,  কার মান ও শান সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে তা নিয়ে ইখতেলাফ চলে আসছে। চলুন এ বিষয়ে একটু আলোকপাত করি। আমরা সকলেই জানি যে, আম্মাজান আই'শাই (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুা) ছিলেন রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী। রূপ, গুন, মেধা, প্রজ্ঞায় ছিলেন পরিপূর্ণ। একদা আমর ইবনে আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছে সবার চেয়ে প্রিয় কে? জবাবে রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) বললেন : আ'ইশাহ।
আমর বললেন : পুরুষদের মধ্যে?  রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) বললেন : আই'শার পিতা!  ---- [ বুখারী : ৩৬৬২]

লক্ষ্য করূন রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)- কে প্রশ্ন করা হল পুরুষদের মধ্যে আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন? উত্তরে তিনি বললেন, আইশাহ'র পিতাকে। অথচ তিনি চাইলেই বলতে পারতেন আমার সাথী আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) -কে। কিন্তু তিনি বললেন আইশাহ'র পিতাকে। এখানেও আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) প্রতি উনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
.

এবার আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) গল্প শুনুন। যিনি মারা যাওয়ার পরও আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে ঈর্ষা করতেন।  উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন,
খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) জীবিত থাকাবস্থায়
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আর কোনো বিয়ে করেননি’’।
---  [মুসলিম ৬১৭৫- ৭৭/২৪৩৬ ]
.

উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) আরও বলেন, ‘‘আমি নাবী (ﷺ)-এর কোনো স্ত্রীর প্রতি এতো ঈর্ষা করিনি যতটা খাদীজাহ’র প্রতি করেছি (অথচ) তিনি (রাসূল ﷺ) আমাকে বিবাহ করার আগেই ইন্তিকাল করেছেন।  কেননা, আমি তাঁকে (রাসূল ﷺ) বারবার তাঁর কথা বলতে শুনেছি, এবং তাঁকে (খাদীজাহ) এই খুশির সংবাদ দেয়ার জন্য আল্লাহ তাঁকে (রাসূল ﷺ) বলেছেন যে, তাঁর জন্য একটি ক্বাসাবের প্রাসাদ থাকবে। এবং যখনই তিনি (রাসূল ﷺ) একটি বকরি যবেহ করতেন, এর একটি অংশ তিনি তাঁর (খাদীজাহ) বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন।’’ --- [ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬১৭৭ ]
.

একদা আম্মাজান আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বসে আছেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- এর সাথে। এমন সময় কেউ একজন দরজায় কড়াঘাত অত:পর  ভিতরে প্রবেশের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করল। আওয়াজ শুনেই রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) চমকে উঠলেন!  এটা কার কন্ঠস্বর? মুহুর্তেই খাদীজার কথা মনে পড়ে গেল! আগন্তুক ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) তাঁকে দেখে বললেন, হায় আল্লাহ! এ তো হা'লা!' উল্লেখ্য যে, হা'লা ছিলেন খাদীজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বোন এবং উভয়ের কন্ঠস্বর একই রকম ছিল!

এই দৃশ্য দেখে আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র খুব ইর্ষা হলো। রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) মৃত স্ত্রীকে এতটা ভালোবাসেন! স্ত্রীর জীবন ফুরিয়ে গেছে, কিন্তু স্ত্রীর জন্য স্বামীর ভালোবাসা ফুরায়নি। মৃত্যুর পরও তিনি তাকে ভুলতে পারছেন না।--- [ বুখারী : ৩৮১০, মুসলিম : ২৪৩৭]
.

ইমাম আহ্‌মাদ ও তিরমিযী (রাহিমাহুমুল্লাহ) থেকে সংকলিত একটি হাদীসে রয়েছে , আম্মাজান আ'ইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, এমন অনেক দিন হয়েছে যে, খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র) প্রশংসা না করে রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) ঘর থেকে বের হন নি! একদিন এভাবে তিনি খাদীজাহ'র প্রশংসা করছিলেন! আমি আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলাম, তিনি কী এমন ছিলেন? তাঁর চেয়েও উত্তম নারী দিয়ে কি আল্লাহ্‌ তাআলা আপনার স্ত্রীর স্থান পূরণ করে দেননি?

একথা শোনামাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রাগত স্বরে বলেন,
'না, আল্লাহ্‌র শপথ, তিনি খাদীজার চাইতে উত্তম আর কাউকেই আমার জীবনে আনেননি। যখন সবাই আমাকে অস্বীকার করেছে, তখন সে আমার ওপর আস্থা রেখেছে। যখন সবাই আমাকে মিথ্যুক ডেকেছে, তখন সে আমাকে বিশ্বাস করেছে। যখন সবাই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন সে, তাঁর সবকিছু দিয়ে আমাকে স্বস্তি দিয়েছে। আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁর মাধ্যমে আমার ওপর রহ্‌মত দিয়েছেন, আমাকে তাঁর থেকে সন্তান দান করেছেন।'

গৃহীত :
--- [আল্লামাহ সফিউর রাহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ)  বি'রচিত সীরাহ্‌গ্রন্থ আর্‌-রাহীকুল মাখতুম থেকে]
.

আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ  (ﷺ)-এর দরবারে কোন হাদিয়া আসলে তিনি বলতেন, তোমরা এই হাদিয়া উমুক মহিলার ঘরে নিয়ে যাও কারণ তিনি আমার খাদীজার বান্ধবী। আবার কখনো বলতেন, তোমরা এই হাদিয়া উমুকের ঘরে নিয়ে যাও, কারণ তিনি আমার খাদীজাকে ভালবাসেন।

আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আম্মাজান আইশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "যখন রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) আম্মাজান খাদীজাতুল কুবরার প্রশংসামূলক আলোচনা শুরু করতেন, তখন বিরতিহীনভাবে করতেন, তিনি ক্লান্ত হতেন না। --- [ তাবরানী , হাদীস নং : ২১ ]
.

সুপ্রিয় পাঠক, রাসুলুল্লাহ  (ﷺ) আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে, কি পরিমাণ ভালোবাসতেন তা নিশ্চয়ই আমরা সকলেই জানি। এবার ভেবে দেখুনতো, তিনি আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে কতটা ভালোবাসতেন যার কারণে আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) পর্যন্ত ঈর্ষা করতেন।  আল্লাহু আকবার।
.

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের সকল বোনকে আম্মাজান খাদীজাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা)-র মত ধৈর্যশীলা, পর্দানশীলা, শোকরগুজারী বান্দী ও স্বামীভক্ত স্ত্রী হওয়ার তাউফীক্ব দান করূন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
.
.
.

লেখক : আখতার বিন আমীর। [ আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিন - আমীন ]
.
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
(Y) শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইন শা আল্লাহ !
ইলমের সাথে আগামীর পথে।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬


আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট

Related Posts

Facebook