#দ্য_ম্যানিফেস্টো
কিভাবে জীবন হয়ে যায় পার!
“পৃথিবীতে আসার পূর্বে, যখন কেউ পার্থিব জীবন নিয়ে ভাবে, তখন তার কাছে তা দীর্ঘ মনে হয়। তদ্রুপ, সে যদি পৃথিবী ছাড়ার পরের স্তরের কথা ভাবে, তাহলে সে জানে যে কবরের জীবন অতি লম্বা। সে যখন বিচার দিবসের কথা ভাবে, সে জানে যে তা পঞ্চাশ হাজার বছর দীর্ঘ এবং যখন সে জান্নাত ও জাহান্নাম নিয়ে ভাবে, সে জানে যে তা কখনোই শেষ হবার নয়।” শাশ্বত জীবন এবং কিয়ামাত দিবস ও কবরের জীবনের ভাগ্য নির্ধারিত হয় ক্ষুদ্র এই পার্থিব জীবনের আলোকে। সেই বাস্তবতা খেয়াল রাখার পরেও, কিভাবে আমরা পার করি দিনগুলো?
দিনকে আমরা যেভাবেই পার করিনা কেন, তা কোন অবস্থাতেই কাজবিহীন নয়। কাজ কিন্তু ঠিকই করছি আমরা। তবে কাজের কাজ করছি কিনা, তা বিশ্লিষ্ট হবার দাবি রাখে। আমাদের কর্মময় তৎপরতার ফসল ফলিত হয়েছে দারুণভাবে। সেগুলো দৃশ্যমানও হয়েছে। টিনের চালার ঘরের স্থলে বহুতল ভবন স্থাপিত হয়েছে, ভ্যান-টেম্পুর যাত্রা কার হাকানোর মাঝে বিলীন হয়েছে, পান্তা-মরিচের আহার বাহারী খাবার আইটেমের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে, অচঞ্চল জীবনে লেগেছে হলিডে-ট্যুরের হাওয়া। প্রাপ্তি হয়েছে আরো অনেক সম্পদ। অগ্রগতি ঘটেছে ‘সোস্যাল হাইয়ারার্কিতে’।
কিন্তু এগুলো তো ক্ষণস্থায়ী কৃতিত্ব মাত্র! স্থায়ী পূণ্য সাধনে কতটা তৎপর আছি আমরা? ‘আমাল-ইবাদাত বৃদ্ধি, ‘ইলমের উন্নতি, ক্ষুধা-দারিদ্র লাঘবে তৎপরতা, ইনসাফ-শান্তি রক্ষায় সক্রিয়তা ইত্যাদি ব্যাপারে হাইলাইটযোগ্য কি অর্জন আছে আমাদের? ক্ষণস্থায়ী অর্জনে ব্যতিব্যস্ত থেকে স্থায়ী অর্জনের তাড়না শূণ্যের কোটায় নামিয়ে রেখেছি। পার্থিব কর্মকান্ডেই বর্তমান পার! এতেই সমুদয় সিরিয়াসনেস। এর মাঝে অন্তর্ভূক্ত শখ ও অবকাশকালীন কর্মকান্ডও। বাদ কেবল পূণ্য প্রচেষ্টা।
এমন ক’জনকে পাওয়া যাবে যারা বলবে যে, বিশ্বকাপ তো আবারও অনুষ্ঠিত হবে, ফুটবল লীগ তো প্রতি বছরেই আয়োজিত হয়, মুভি-সিরিজ তো একের পর এক মুক্তিপ্রাপ্ত হতেই থাকে, পার্টি-উৎসব তো হর-হামেশাই নিক্ষিপ্ত হয়- অতএব, ক্রীড়া-বিনোদনে এখনই জড়াব না, পরে দেখা যাবে এসব। অথচ, পূণ্যের কাজের সিডিউল পেছানো হয় কত সহজে!
এমনিতেই ক্ষুদ্র এই জীবনের কতটা সময়- অপরিহার্যভাবে- ব্যয়িত হয় কর্মশূণ্য উপায়ে! আবার আমাদের মূল ঝোঁক দুনিয়াবি কাজগুলোয়। নিষ্ঠার উত্তম ব্যবহারটিও সেখানে। ফলশ্রুতিতে, ধার্মিকতায় আমাদের কোয়ালিটি অত্যন্ত দুর্বল। “কেউ যদি এই পৃথিবীর জীবনের দিকে দৃষ্টি দেয়- ধরা যাক তা ৬০ বছরের- সে দেখে, এর ৩০ বছর কাটে ঘুমিয়েই, ১৫ অথবা তার কাছাকাছি বছর কাটে শৈশবে এবং অবশিষ্টাংশের অধিকাংশই কাটে প্রবৃত্তির চাহিদা, খাদ্য এবং টাকার পিছনে। যখন সে হিসাব করে, আর কি বাকি রইল- তখন সে উদঘাটন করে, বাকি অংশও লোক দেখানো কর্মকান্ড এবং গাফলতি ভিন্ন আর কিছু নয়।”
আমরা যে বয়সেরই হই না কেন, আমাদের নিজ জীবনের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করা দরকার। যেভাবে জীবনটি চলছে- যেভাবে একে একে শৈশব, কৈশোর, যৌবন অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে- তাতে একথা অনস্বীকার্য যে, ভোগ্য বস্তু যোগাড়েই খোয়ানো যাচ্ছে অধিকাংশ সময়। নিজেদেরকে এখন তাই সেই প্রশ্ন করতে হবে, যে প্রশ্নটি- উপরোল্লিখিত দুই উদ্ধৃতির কথাগুলো বলার পর- ছুড়ে দিয়েছেন ইবন আল যাওজী, “পরজীবনের মূল্য হল এই জীবনের সময়টুকু, তা ক্রয় করতে হাতে আর কি জমা থাকল?”[৯]
জীবনের সময়ের কতটুকু পরজীবন ক্রয়ে ব্যয় করছি- সে ভাবনাটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ভাবনা হল- ইহজীবনে সময়ের যে অপব্যবহার করছি, পরজীবন ক্রয়ের ক্ষেত্রে তা কতটুকু ‘নেগেটিভ ভ্যালু’ যোগ করবে!
লিখেছেন এহসানুল ইসলাম

লেখক: 