|| মুমিন এবং বিপদাপদ ||
আজকাল মৃত্যুভয়ে ভীত মুমিনরা নিরাপদ ইসলামের সন্ধানে বিভোর। কুরআন-সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই তাদের এই পরিণতি। কারণ, তারা যদি কুরআন-সুন্নাহকে হৃদয়ে ধারণ করত, তাহলে অবশ্যই জানত যে, আল্লাহ তাআলা সর্বযুগেই তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন, যেমনিভাবে তিনি তাঁর নবিগণকে পরীক্ষা করেছিলেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে :
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন দুনিয়াতে তার বিপদ ত্বরান্বিত করেন। আর যখন তিনি তাঁর বান্দার অকল্যাণ চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেন। বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তিনি তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। তখন যে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি। আর যে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।’[১]
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন :
إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ بَلَاءً الْأَنْبِيَاءَ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ
‘নিশ্চয় সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপদে আক্রান্ত হয় নবিগণ। এরপর ক্রমান্বয়ে যে তাদের নিকটবর্তী, এরপর যে নিকটবর্তী এবং এরপর যে নিকটবর্তী।’[২]
হাদিসটি অন্যত্র এভাবে এসেছে :
عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً ؟ قَالَ : ” الْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ، فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ، وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَمَا يَبْرَحُ الْبَلَاءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الْأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ
মুসআব ইবনু সাদ রহ. হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (সাদ রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল ﷺ, মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন, নবিদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধাৰ্মিক, তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার ওপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে জমিনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না।[৩]
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন :
مَا يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ
মুমিন নারী-পুরুষের ওপর—তাদের জীবন, সন্তান ও ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ তাআলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়।[৪]
আল্লাহ তাআলা এ সকল বিপদাপদের মাধ্যমে বান্দার ইমান সুদৃঢ় করেন এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ বলেন :
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ
‘তোমরা কি ভেবে রেখেছ, তোমরা এমনি এমনি জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো পর্যন্ত তোমাদের ওপর সেই রকম অবস্থা আসেনি, যেমনটা এসেছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। তাদের ওপর এসেছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্ট এবং তাদেরকে করা হয়েছিল প্রকম্পিত, এমনকি রাসুল এবং তাঁর ইমানদার সঙ্গীগণ বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে। শোনো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।’[৫]
إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (140) وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ (141) أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ
‘তোমাদের যদি আঘাত লেগে থাকে তবে তাদেরও অনুরূপ আঘাত ইতিপূর্বে লেগেছিল। এ তো দিন-পরিক্রমা, যা আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে বদলাতে থাকি। এর উদ্দেশ্য ছিল মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা এবং তোমাদের মধ্যে কিছু লোককে শহিদ করা। আর আল্লাহ জালিমদেরকে ভালোবাসেন না। এবং উদ্দেশ্য ছিল এটাও যে, আল্লাহ যেন মুমিনদেরকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন ও কাফিরদেরকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেন। তোমরা কি ভেবে রেখেছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে পৌঁছে যাবে, অথচ আল্লাহ এখনো পর্যন্ত তোমাদের মধ্য হতে সেই সকল লোককে যাচাই করে দেখেননি, যারা জিহাদ করবে এবং তাদেরকেও যাচাই করে দেখেননি, যারা অবিচল থাকবে।’[৬]
সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ يُوعَكُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ تُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا. قَالَ ” أَجَلْ إِنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلاَنِ مِنْكُمْ ”. قُلْتُ ذَلِكَ أَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ قَالَ ” أَجَلْ ذَلِكَ كَذَلِكَ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا سَيِّئَاتِهِ، كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا ”
আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি তো কঠিন জ্বরে আক্রান্ত! তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমাদের দুব্যাক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জুরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম এটি এ জন্য যে, আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেন হ্যাঁ, ব্যাপারটি এমনই। কেননা, যেকোনো মুসলিম বিপদে আক্রান্ত হয়, চাই একটি কাঁটা (বিদ্ধ হওয়া) কিংবা আরও ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যায়।[৭]
......
[১] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৬। হাদিসটি হাসান।
[২] মুসনাদু আহমাদ : ২৭০৭৯
[৩] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৮
[৪] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৯
[৫] সুরা বাকারাহ : ২১৪
[৬] সুরা আলে ইমরান : ১৪০-১৪২
[৭] সহিহ বুখারি : ৫৬৪৮
.
.
📝Courtesy--Munirul islam ibn zakir
আজকাল মৃত্যুভয়ে ভীত মুমিনরা নিরাপদ ইসলামের সন্ধানে বিভোর। কুরআন-সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই তাদের এই পরিণতি। কারণ, তারা যদি কুরআন-সুন্নাহকে হৃদয়ে ধারণ করত, তাহলে অবশ্যই জানত যে, আল্লাহ তাআলা সর্বযুগেই তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন, যেমনিভাবে তিনি তাঁর নবিগণকে পরীক্ষা করেছিলেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে :
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন দুনিয়াতে তার বিপদ ত্বরান্বিত করেন। আর যখন তিনি তাঁর বান্দার অকল্যাণ চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেন। বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তিনি তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। তখন যে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি। আর যে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।’[১]
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন :
إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ بَلَاءً الْأَنْبِيَاءَ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ
‘নিশ্চয় সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপদে আক্রান্ত হয় নবিগণ। এরপর ক্রমান্বয়ে যে তাদের নিকটবর্তী, এরপর যে নিকটবর্তী এবং এরপর যে নিকটবর্তী।’[২]
হাদিসটি অন্যত্র এভাবে এসেছে :
عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً ؟ قَالَ : ” الْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ، فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ، وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَمَا يَبْرَحُ الْبَلَاءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الْأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ
মুসআব ইবনু সাদ রহ. হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (সাদ রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল ﷺ, মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন, নবিদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধাৰ্মিক, তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার ওপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে জমিনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না।[৩]
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন :
مَا يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ
মুমিন নারী-পুরুষের ওপর—তাদের জীবন, সন্তান ও ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ তাআলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়।[৪]
আল্লাহ তাআলা এ সকল বিপদাপদের মাধ্যমে বান্দার ইমান সুদৃঢ় করেন এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ বলেন :
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ
‘তোমরা কি ভেবে রেখেছ, তোমরা এমনি এমনি জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো পর্যন্ত তোমাদের ওপর সেই রকম অবস্থা আসেনি, যেমনটা এসেছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। তাদের ওপর এসেছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্ট এবং তাদেরকে করা হয়েছিল প্রকম্পিত, এমনকি রাসুল এবং তাঁর ইমানদার সঙ্গীগণ বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে। শোনো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।’[৫]
إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (140) وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ (141) أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ
‘তোমাদের যদি আঘাত লেগে থাকে তবে তাদেরও অনুরূপ আঘাত ইতিপূর্বে লেগেছিল। এ তো দিন-পরিক্রমা, যা আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে বদলাতে থাকি। এর উদ্দেশ্য ছিল মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা এবং তোমাদের মধ্যে কিছু লোককে শহিদ করা। আর আল্লাহ জালিমদেরকে ভালোবাসেন না। এবং উদ্দেশ্য ছিল এটাও যে, আল্লাহ যেন মুমিনদেরকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন ও কাফিরদেরকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেন। তোমরা কি ভেবে রেখেছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে পৌঁছে যাবে, অথচ আল্লাহ এখনো পর্যন্ত তোমাদের মধ্য হতে সেই সকল লোককে যাচাই করে দেখেননি, যারা জিহাদ করবে এবং তাদেরকেও যাচাই করে দেখেননি, যারা অবিচল থাকবে।’[৬]
সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ يُوعَكُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ تُوعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا. قَالَ ” أَجَلْ إِنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلاَنِ مِنْكُمْ ”. قُلْتُ ذَلِكَ أَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ قَالَ ” أَجَلْ ذَلِكَ كَذَلِكَ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا سَيِّئَاتِهِ، كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا ”
আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি তো কঠিন জ্বরে আক্রান্ত! তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমাদের দুব্যাক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জুরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম এটি এ জন্য যে, আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেন হ্যাঁ, ব্যাপারটি এমনই। কেননা, যেকোনো মুসলিম বিপদে আক্রান্ত হয়, চাই একটি কাঁটা (বিদ্ধ হওয়া) কিংবা আরও ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যায়।[৭]
......
[১] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৬। হাদিসটি হাসান।
[২] মুসনাদু আহমাদ : ২৭০৭৯
[৩] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৮
[৪] সুনানুত তিরমিজি : ২৩৯৯
[৫] সুরা বাকারাহ : ২১৪
[৬] সুরা আলে ইমরান : ১৪০-১৪২
[৭] সহিহ বুখারি : ৫৬৪৮
.
.
📝Courtesy--Munirul islam ibn zakir

লেখক: 
